মন বৈশাখী

মন বৈশাখী পর্ব-২ কলমে--পূজা ***সামনে কোথাও একটা জোরে বাজ পড়লো। অয়নের ভিতরটাও কেমন যেন কেঁপে উঠলো। হাতটা আপনা থেকেই আলগা হয়ে ছাতাটা উড়ে গেল। ভিজতে লাগলো অয়নের সারা শরীর, ভিজে উঠলো চোখের পাতা। বৃষ্টির বর্ষনে না কী দুঃখের বর্ষনে কে জানে!!! ---কোথায় চলে যাবি তুই? (বেশ শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন এলো অয়নের কাছ থেকে) কষ্ট আড়াল করে মিথ্যে একটা হাসি টেনে তিস্তা বললো --অনেক দূরে, এই গ্রাম, এই নদী, এই কালবৈশাখী সবাই কে ছেড়ে চলে যাবো... অনে.. ক দূরে দুহাতে শক্ত করে ধরে তিস্তা কে টেনে তুললো অয়ন। নিজের সামনা সামনি দাঁড় করিয়ে দাতে দাত চেপে জিজ্ঞাসা করলো ---কোথায় যাবি তুই? বেশ অবাক হলো তিস্তা। হঠাৎ এতো রেগে যাওয়ার কী হলো! পরক্ষনেই সামলে নিয়ে অয়নের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো -- ৬৫ বছরের বরের ঘরকন্না করতে চলে যাবো বিদেশে। সেটা বলার জন্য তোমায় ডেকে ছিলাম --- এতে আমাকে এতো ঘটা করে বলার কি আছে? --আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে! আসলে শুধু এটা না আর একটা কথা বলার ছিল তোমাকেPrrbook Upworkmarket postmaster topguru monstarpublic usamarking powerbank cutly Redifiv bookstar link Youtubbook tumblrro Postmind Probook SocialMarking Prrmarsub Hastagcode Wortweb wwwsmbook quora-answer curred-add wordpress-wo classifiedsa Top-Backlinks Aliexpress Twin-M F-s-a-m-f Gabsocialm Temp Mail ---কী কথা? -- আমি তোমাকে ভালোবাসি! ---মা... -- থাক্, আমি কথাটা বলতে এসে ছিলাম। তোমার থেকে এ নিয়ে কিছু শুনতে নয়। নতুন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছি কি না তাই মনে কোনো আক্ষেপ রাখতে চাইনি। পরে বিদেশে থাকা কালিন যদি মনে হয় তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকেই জানানো হয়নি, সেটা তো তোমার সাথে অন্যায় হয়ে যাবে। আর আমি আগে থেকেই জানি তোমার উত্তর কী হবে। তাই আর কিছু বোলো না এ নিয়ে। কোনো অভিযোগ রেখোনা মনে , আমি নিজেও জানি না কবে , কীভাবে , তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যাও এবার বাড়ি ফিরে যাও। ---আর তুই? -- কিছুক্ষন পর চলে যাবো বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে অয়নের। সে কখনো ভালোবাসা-বাসিতে বিশ্বাস করে নি। ভালোবাসা কি, কীভাবে তা উপলব্ধি করা যায় সে সম্পর্কেও কোনো ধারনা নেই। তিস্তাকে নিয়ে তার মনে আদৌ কোনো অনুভূতি আছে কি না সেটাও সে জানে না। কিন্তু যখন অয়ন রোয়াকে বসে আড্ডা দেয় তখন তিস্তা সে পথে পা দেবার আগেই অয়ন বাতাসের মধ্যে খবর পেয়ে যায় "সে আসছে"। তিস্তা কে আসতে দেখে সদ্য জ্বালানো সি,গা,রে,ট টাও অতি বিচক্ষণতার সাথে পা দিয়ে পিষে দেয় সে। তিস্তার পায়ের শব্দে চারিদিক কেমন স্তব্ধ হয়ে গিয়ে কেবল অয়ন নিজের হৃদপিন্ডের কোলাহল শুনতে পায়। কিন্তু পরক্ষনেই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। তাই দিনে দুবার হওয়া এই অস্বাভাবিক ঘটনাটাকে সে এতো গুরুত্ব দেয়নি কখনো।তিস্তার দিকে কখনো চোখ তুলে তাকানোর ইচ্ছাও হয়নি তার। আজ কেন তাহলে এমন হচ্ছে? তিস্তার কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে যেন ওর কলিজা টাতে ধারালো নখ বিশিষ্ট কোনো হাত থাবা বসিয়েছে। ছিড়ে যাচ্ছে ভিতর টা। শুধু রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে না। হয়তোবা হচ্ছে যা চোখে পড়ছে না। শুকনো ঢোক গিলে,বড় একটা নিঃশ্বাস টেনে নিল অয়ন নিজের ভিতরে ---তোর এ বিয়েতে মত আছে? -- না থাকার কোনো কারন নেই! ---তাহলে করে নিস্ , এখন বাড়ি চল। তোকে বাড়ির সামনে ছেড়ে তারপর আমি বাড়ি যাবো! --এই ঝড় বাদলের দিনে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে কাক ভেজা হয়ে একসাথে বাড়ি ফিরছে ,এটাকে কী সবাই ভালো চোখে নেবে বলে মনে হয় তোমার? ---কে কী ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না --আমার আসে, পরের মাসে আমার বিয়ে। আর আজ আমি পাড়ার নাম করা বখাটে ছেলেটার সাথে ভিজে বাড়ি ফিরেছি জানলে আমার হবু স্বামী যে বিয়ে আগেই আমাকে ত্যাগ করবেন। তখন আমি কোথায় যাবো ---কেন তোর বাপের ভিটে নেই --ভিটে কামড়ে থাকলে কি আর পেট চলবে ---তুই তো টিউশনি করিস্ ---ও দিয়ে কি আর সারা মাস চলে, ঐ দিন পনেরো যেমন তেমন করে কাটাই তার পর আবার সেই মায়ের কাছে ভিখারীর মতো খাবার চাইতে হয়! ---আচ্ছা তোকে আরও দুটো টিউশনি জোগাড় করে দোবো না হয় -- তুমি কি আমাকে পরোক্ষ ভাবে বিয়ে করতে বারন করছো ---অতো কথা বলতে চাই না, তুই বাড়ি চল আগে। অনেক্ষন ধরে ভিজছিস্, এবার শরীর খারাপ করবে। -- মেয়ে মানুষের জান, এতো সহজে কিছু হবে না। তুমি যাওনা আমি চলে যাবো একটু পরেই। অয়ন তিস্তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো ওখান থেকে। গ্রামের জনবসতি তে ঢোকার আগেই তিস্তার হাত ছেড়ে দিয়ে ওকে বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে বললো। তিস্তা চলে যাচ্ছে। নিজের মুখের জল একহাত দিয়ে টেনে নামিয়ে,অন্য হাত ভিজে চুলের ভাঁজে ঢুকিয়ে টেনে ধরলো অয়ন। এতো অস্থির কখনো লাগেনি তার। তিস্তা যত দূরে যাচ্ছে ওর মনে ভিতর যন্ত্রণা ততই প্রবল হচ্ছে। তবে কী একেই ভালোবাসা বলে? পরের দিন সকালে আজ সকাল থেকেই অয়ন কে খুব মনমরা আর অন্যমনস্ক লাগছে। ওর সাঙ্গ-পাঙ্গ দের মধ্যে দুজন ইতি মধ্যে জিজ্ঞাসা করেছে "অয়ন ভাইয়া আজ সকাল সকাল ব্যাটারি ডাউন কেন? কি ব্যাপার? " সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে বার বার উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তিস্তার বাড়ির দিকে যাওয়া রাস্তা টার দিকে। কিছুক্ষন পর সামনে দিয়ে নবারুণ মিত্র কে আসতে দেখে তৎক্ষনাৎ আগের গুন্ডা লুকে ফিরে আসে অয়ন ---কী ব্যাপার নবারুণ দা, আজ হঠাৎ এ পথে? -- আর বলিস্ কেন, চাটুজ্যের মেয়েটা কাল থেকে পড়াতে আসছে না, আজ সকালেও এলোনা তাই একবার দেখতে যাচ্ছি, হঠাৎ অয়নের ভিতরটা ধক্ করে উঠলো। নবারুণ দা যদি গিয়ে বলে দেয় কাল তিস্তা পড়াতে যায়নি তাহলে যে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। না না নবারুণ দা কে আটকাতেই হবে। ---আরে আরে এই সামান্য ব্যাপারের জন্য তোমাকে যেতে হবে কেন, তুমি বসো চা খাও আমি পচাকে পাঠাচ্ছি খবর নিতে। ওই ছটু এখানে এক কাপ চা দিয়ে যা তো। চায়ের দোকানের ছটুকে চা দিতে বললো অয়ন। নবারুণ লোকটা পাড়ার মাথা দের মধ্যে একজন। বেশ আমুদে। প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। কেউ যদি ওনাকে একটু তেল দিয়ে কথা বলে ব্যাস ওমনি উনি তার কাছে সহজ মনে গড়গড় করে সব বলে দেয়। যাকে বলে পেট পাতলা। অয়নের আপ্যায়নে উনি খুশি হয়ে বসে পড়লেন চা খেতে। সেই সুযোগে অয়ন পচাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে পাঠালো তিস্তা র বাড়িতে। পচা কথা মত চলে গেলো। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পচা ফিরে এলো। বেশ উৎসুক হয়ে অয়ন জিজ্ঞাসা করলো- ---কী রে কি হল? -- অয়ন দা ,তিস্তার মা বললো নবারুণ দা কে জানিয়ে দিতে ও আর পড়াতে যাবেনা। নবারুণ দা বললো--হঠাৎ পড়াতে আসবে না কেন বললো। মাইনা তো ঠিক সময় মতোই দিই আমি আর ওর চাহিদা মতোই দিই। তাহলে কি হল বলতো অয়ন? এই সময় নতুন দিদিমনি কী করে পাবো মেয়ে গুলোর জন্য?! বেশ চিন্তিত সুরে কয়েকদফা অভিযোগ করে চলে গেলো নবারুণ মিত্র । অন্যদিকে অয়ন মনে মনে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল। কি এমন হলো যে পয়সা লোভী মহিলা হঠাৎ করে মেয়ের টিউশনি পড়ানো বন্ধ করে দিল! আচমকাই অয়ন বলে উঠলো ---হ্যারে পচা তুই যে চাটুজ্যে মাস্টারের বাড়ি গেলি চুন্নি-রুন্নির (নবারুণ এর দুই মেয়ে) দিদি মনির খবর জানতে তা দিদিমনি কে দেখেছিলি? --না অয়ন দা তিস্তা দিদি কে তো দেখিনি। --- ও ঠিক আছে রোয়াক থেকে উঠে পড়লো অয়ন। -- আরে গুরু আজ এক্ষুনি উঠে পড়লে? ---শরীর টা ভালো লাগছে না। বাড়ি যাচ্ছি। তোরা থাক। মনটা বড় অস্থির হচ্ছে অয়নের কেন যে হঠাৎ তিস্তা টিউশনি পড়ানো বন্ধ করলো কে জানে!!! চলবে........... গল্প সংক্রান্ত যেকোনো মন্তব্য করে যাবেন। আপনাদের ছোট্ট একটি মন্তব্য লেখিকার মনে নতুন আশার আলো জ্বালায়, নতুন প্রেরনা জোগায়। আমি একজন নবীন লেখিকা,তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

Comments